![]() |
| Photo : Collected from goole |
বাংলাদেশে ভূমিকম্পের সম্ভাব্য ঝুঁকি বিবেচনা করে দেশকে তিনটি আলাদা জোনে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে জোন-১ উচ্চঝুঁকিপূর্ণ, জোন-২ মাঝারি ঝুঁকির এবং জোন-৩ তুলনামূলক কম ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত। আবহাওয়া অধিদপ্তরের মানচিত্রে এ সব অঞ্চল স্পষ্টভাবে দেখানো আছে।
মানচিত্র বিশ্লেষণে দেখা যায়—দেশের উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্ব অংশের কিছু জেলা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। সাধারণত ফল্ট লাইন বা টেকটনিক প্লেটের সীমানার কাছাকাছি এলাকায় বড় ধরনের ভূমিকম্প হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। বিশেষ করে সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের ৯টি জেলা, ঢাকা বিভাগের টাঙ্গাইল, গাজীপুর, নরসিংদীর কিছু অংশ, পুরো কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, এবং খাগড়াছড়ি–রাঙামাটির বিস্তীর্ণ এলাকাকে উচ্চঝুঁকিপূর্ণ ধরা হচ্ছে।
অন্যদিকে খুলনা, যশোর, বরিশাল ও পটুয়াখালী তুলনামূলকভাবে নিরাপদ, অর্থাৎ জোন-৩ এ পড়ে।
তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭৬ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে পাঁচবার বড় ধরনের ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে। এর প্রায় সবগুলোর উৎস ছিল সিলেট, মৌলভীবাজার, রাঙামাটি, বান্দরবান ও কক্সবাজার এলাকায়। ফলে ভবিষ্যতেও এসব অঞ্চলে শক্তিশালী ভূমিকম্পের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
এ ছাড়া ভারতের আসাম ও মেঘালয়ের সীমান্তের কাছাকাছি হওয়ায় সিলেট–ময়মনসিংহ অঞ্চলকে আরও সংবেদনশীল হিসেবে দেখা হয়।
দেশের চারদিকে পাঁচটি প্রধান ভূমিকম্প উৎসস্থল বা ফল্ট লাইন শনাক্ত আছে। এর মধ্যে প্লেট বাউন্ডারি–১ মিয়ানমার থেকে নোয়াখালী পর্যন্ত বিস্তৃত, প্লেট বাউন্ডারি–২ নোয়াখালী থেকে সিলেট অঞ্চলে, এবং প্লেট বাউন্ডারি–৩ সিলেট হয়ে ভারতের দিকে চলে গেছে।
এ ছাড়া ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে ডাউকি ফল্ট এবং মধুপুর ফল্ট রয়েছে—যেগুলোও ভূমিকম্পের জন্য উল্লেখযোগ্য উৎসস্থল হিসেবে বিবেচিত।
রাজউকের তথ্য বলছে, ঢাকায় বর্তমানে প্রায় ২১ লাখ ভবন রয়েছে। এর মধ্যে ১৫ লাখ ভবন দুইতলা বা তার নিচের, যেগুলোতে ঝুঁকি তুলনামূলক কম। কিন্তু ৪ থেকে ৩০ তলা বিশিষ্ট প্রায় ৬ লাখ ভবন ভূমিকম্পে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়তে পারে। বড় ধরনের কম্পনে এসব ভবন ধসে পড়লে প্রাণহানির মাত্রা ভয়াবহ হতে পারে। এজন্য ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোকে দ্রুত সংস্কারের মাধ্যমে ভূমিকম্প-সহনশীল করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
তাদের মতে, ভূমিকম্প এমন একটি দুর্যোগ যা একেবারে প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। তবে আগাম সতর্কতা এবং পূর্বাভাস ক্ষয়ক্ষতি অনেক কমাতে পারে। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত দেশগুলো এ বিষয়ে দীর্ঘ গবেষণা করে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে।
বুয়েটের অধ্যাপক ড. মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেন, বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরেই ভূমিকম্প ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। সাম্প্রতিক কম্পন মানুষের উদ্বেগ আরও বাড়িয়েছে।
তার ভাষায়, মাত্র ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পই যদি রাজধানী ও আশপাশে ভবন ক্ষতির কারণ হয়, তাহলে বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ হতে পারে—তা সহজেই অনুমেয়।
তিনি আরও বলেন, ঢাকায় অনেক ভবনই বিল্ডিং কোড মানা ছাড়াই তৈরি হচ্ছে, যা বড় ঝুঁকি ডেকে আনছে। এসব বিষয়ে সরকারের কঠোর নজরদারি জরুরি।
