জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোট ইস্যুতে মুখোমুখি বিএনপি–জামায়াত

ছবি : সংগৃহীত


জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোট নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে বিরোধপূর্ণ অবস্থান তৈরি হয়েছে। ফলে বিষয়টি ঘিরে নতুন রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। সরকারকে আলোচনার ভিত্তিতে পরামর্শ দেওয়ার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর হাতে যে সাত দিনের সময় দেওয়া হয়েছিল, তা প্রায় শেষের পথে।

এমন অবস্থায় বৃহস্পতিবার দুপুরে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে আলোচনায় বসার প্রস্তাব দেন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা এ বিষয়ে গতকাল দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে পরিষ্কারভাবে সিদ্ধান্ত জানিয়েছি। সেটিই আমাদের অবস্থান।”

শুক্রবার (৭ নভেম্বর) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি এই মন্তব্য করেন। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ ও ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

বৃহস্পতিবার রাতে গুলশান কার্যালয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে জামায়াতের আলোচনার প্রস্তাবটি নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে দলের নীতিনির্ধারকেরা জুলাই জাতীয় সনদে যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, তা আইনগতভাবে বাস্তবায়নের জন্য এবং নির্ধারিত সময়ে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের পদক্ষেপ নিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

বিএনপি নেতারা বলেন, কোনোভাবেই নতুন ইস্যু তুলে বা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার পথে বাধা দেওয়া উচিত নয়।

বৈঠক শেষে জানানো হয়, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে দীর্ঘ আলোচনার পর যেসব বিষয়ে একমত হয়ে ১৭ অক্টোবর সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় সনদ স্বাক্ষরিত হয়েছে, বিএনপি তার অংশীদার হিসেবে সেসব সিদ্ধান্তকে ধারণ করে। দলটি সংবিধান ও প্রচলিত আইন অনুযায়ী সনদ বাস্তবায়নে অঙ্গীকারবদ্ধ।

মির্জা ফখরুল বলেন, “গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে যারা জীবন দিয়েছেন, তাদের ত্যাগকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বিএনপি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে— আলোচনায় গঠিত জাতীয় ঐকমত্য বাস্তবায়নে সব রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ থাকবে। কোনোভাবেই নতুন সংকট তৈরি করা উচিত নয়।”

অন্যদিকে, জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. তাহের জানান, বিএনপির সঙ্গে ইতিবাচকভাবে কথা হয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপে বসতে চাই। বিএনপির মহাসচিবের সঙ্গে কথা হয়েছে, তিনি বলেছেন দলের দায়িত্বশীলদের সঙ্গে পরামর্শ করে জানাবেন।”

ডা. তাহের আরও বলেন, “যদি বিএনপি ইতিবাচক সাড়া দেয়, তাহলে আমরা সরাসরি আলোচনা করতে চাই। এখন ৯-দলীয় জোটের প্রতিনিধিরাও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। তারাও আলোচনায় আগ্রহী।”

তিনি মনে করেন, “পরিস্থিতি আলোচনার মাধ্যমে স্থিতিশীল করা গেলে সব দলই নির্বাচনের পথে এগোবে। সময় এখন বড় বিষয় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। নির্বাচন সামনে চলে এলে আসন বণ্টন ও জোট গঠনের আলোচনা শুরু হবে।”

সোমবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, রাজনৈতিক দলগুলোকে সাত দিনের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে একমত হয়ে সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠাতে হবে। কিন্তু সময় শেষ হতে চললেও এখনো দলগুলোর মধ্যে আনুষ্ঠানিক আলোচনার কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন