![]() |
| ছবি : সংগৃহীত |
বিশ্ব খাদ্য দিবসে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশের কৃষকদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তাদের প্রতি তাঁর দলের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশের ভিত্তি কৃষকদের হাতেই গড়া, তাদের ত্যাগেই দেশ পুষ্ট হয়েছে এবং তাদের অটল দৃঢ়তার ফলেই দেশ শক্তি পেয়েছে।
বগুড়ার উর্বর জমিন থেকে শুরু করে বরিশালের ঐতিহ্যবাহী ‘ভাসমান বাগান’ পর্যন্ত—প্রতিটি শস্যদানার মধ্যেই কৃষকদের সহনশীলতা এবং দেশের সম্মিলিত ভবিষ্যতের গল্প লুকানো আছে, মন্তব্য করেন তারেক রহমান।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) বিশ্ব খাদ্য দিবস উপলক্ষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, বিএনপি বিশ্বাস করে যে সরকার, কৃষক, উদ্যোক্তা ও সাধারণ মানুষের সম্মিলিত অংশগ্রহণের মাধ্যমেই সত্যিকারের খাদ্য নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। এই অংশীদারিত্বের মাধ্যমেই একটি টেকসই খাদ্যব্যবস্থা গড়ে তোলা যাবে।
তারেক রহমান উল্লেখ করেন যে জাতীয় নেতা প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যখন নেতৃত্ব গ্রহণ করেন, তখন দেশ ছিল দুর্ভিক্ষ ও হতাশায় আচ্ছন্ন। জিয়াউর রহমান উপলব্ধি করেছিলেন যে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ছাড়া স্বাধীনতার অর্থ অসম্পূর্ণ। তাঁর দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ পরনির্ভরশীলতা ছেড়ে মর্যাদার পথে যাত্রা শুরু করে। সেচ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ, খাল খনন এবং একাধিক ফসল চাষের উদ্যোগের মাধ্যমে এককালের দুর্ভিক্ষপীড়িত জাতিকে তিনি খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার পথে নিয়ে যান।
পরবর্তীকালে প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এই ঐতিহ্যকে আরও এগিয়ে নিয়ে যান। তাঁর আমলে সার ভর্তুকি, গ্রামীণ বিদ্যুতায়ন এবং ‘কাজের বিনিময়ে খাদ্য’ কর্মসূচির মাধ্যমে কৃষকদের ক্ষমতায়ন করা হয়। এই পদক্ষেপগুলো গ্রামাঞ্চলে নতুন জীবন এনেছিল এবং নিশ্চিত করেছিল যেন কোনো পরিবার অনাহারে না থাকে। তারেক রহমান বলেন, এই শক্তিশালী ভিত্তির ওপরই আজকের বাংলাদেশ দাঁড়িয়ে আছে।
ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরও বলেন, বর্তমানে যখন বাংলাদেশ খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি, পানির সংকট এবং জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির সম্মুখীন, তখন আমাদের এই ভিত্তিকে আরও মজবুত করতে হবে। শুধু দেশের মানুষের জন্য নয়, যারা আমাদের দেশে আশ্রয় নিয়েছে তাদের জন্যও এটি জরুরি। তিনি বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী শিবির—যেখানে প্রায় ১১.৫ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছে—সেখানে আন্তর্জাতিক সহায়তা কমে যাওয়ায় প্রতি পরিবারে খাদ্য সহায়তার পরিমাণ কমে মাত্র ছয় ডলারে নেমে আসার বিষয়টি তুলে ধরেন।
তারেক রহমানের মতে, এই সংকটে খাদ্য সহায়তা পুনরুদ্ধার এবং রোহিঙ্গাদের জীবিকা অর্জনের সুযোগ জোরদার করতে সরকার, আন্তর্জাতিক সংস্থা, দাতা দেশ এবং বেসরকারি অংশীদারদের সমন্বিত ও জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া এখন অত্যন্ত প্রয়োজন। তিনি বিশ্ব সম্প্রদায়কে এই যৌথ সংকট মোকাবিলায় তাদের প্রতিশ্রুতি নতুন করে ব্যক্ত করার আহ্বান জানান।
খাদ্য ও কৃষি নিরাপত্তা বিষয়ে বিএনপির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরে তিনি বলেন:
কৃষককে সরাসরি সুবিধা: প্রতিটি কৃষককে একটি নিরাপদ ডিজিটাল পরিচয়পত্র দেওয়া হবে, যার মাধ্যমে তারা সরাসরি সার, ভর্তুকি, ন্যায্যমূল্য, ঋণ, ফসল বিমা এবং সরকারি ক্রয়ে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন। এতে কোনো মধ্যস্বত্বভোগী থাকবে না, ফলে শোষণ বন্ধ হবে এবং কৃষক জাতীয় অর্থনীতির প্রকৃত অংশীদার হবেন।
কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও বাজার সংযোগ: কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত খাতে শীতল সংরক্ষণাগার, প্রক্রিয়াজাত শিল্প এবং রপ্তানিমুখী খাদ্য শিল্পের মাধ্যমে ১৩ লাখ নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করা হবে। কৃষকদের স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে যুক্ত করা হবে।
খাদ্য অপচয় রোধ ও আয় বৃদ্ধি: আধুনিক গুদাম এবং কোল্ড স্টোরেজ স্থাপন করে খাদ্যের অপচয় কমানো হবে এবং কৃষকের আয় বাড়ানো হবে।
কৃষি উদ্যোক্তা তৈরি: তরুণদের কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য যান্ত্রিকীকরণ, ড্রোন প্রযুক্তি এবং স্টার্টআপ ফান্ড প্রদান করা হবে।
