ভিটামিন ‘ডি’ কম থাকলেই বাড়ে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি

ছবি : সংগৃহীত


হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখার পেছনে ভিটামিন ‘ডি’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে—এমন প্রমাণ এখন ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে। রক্তে এই ভিটামিনের ঘাটতি হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। তবে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন ৬০০ থেকে ৮০০ ইউনিট ভিটামিন ‘ডি’ গ্রহণের যে পরামর্শ সাধারণত চিকিৎসকেরা দিয়ে থাকেন, তা অনেকের ক্ষেত্রেই যথেষ্ট নয়। কিছু রোগীর জন্য রক্তে ভিটামিন ‘ডি’-এর আদর্শ মাত্রা বজায় রাখতে প্রতিদিন ১০ হাজার ইউনিটেরও বেশি প্রয়োজন হতে পারে।

গবেষকরা বলছেন, এতদিন পর্যন্ত ভিটামিন ‘ডি’-কে মূলত হাড় শক্ত রাখার উপাদান হিসেবে বিবেচনা করা হলেও, এখন এর গুরুত্ব হার্টের স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রেও সমান বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু ঠিক কতটা ভিটামিন ‘ডি’ শরীরে প্রয়োজন, এই হিসাবটা মোটেও সহজ নয়। তাই প্রত্যেকের প্রয়োজন আলাদা করে নির্ধারণ করা জরুরি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সঠিকভাবে রক্ত পরীক্ষা করে প্রত্যেকের জন্য উপযুক্ত মাত্রার ভিটামিন ‘ডি’ নির্ধারণ করা গেলে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকটা কমানো সম্ভব। এজন্য “একই ডোজ সবার জন্য” এই পুরোনো ধারণা বদলে রোগীর শরীরের অবস্থা ও প্রয়োজন অনুযায়ী সাপ্লিমেন্ট নির্ধারণ করাই সবচেয়ে কার্যকর উপায় হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের অলাভজনক স্বাস্থ্য সংস্থা ইন্টারমাউন্টেন হেলথ-এর সাম্প্রতিক গবেষণায় প্রশ্ন তোলা হয়েছে, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের প্রচলিত ডোজ বা পরামর্শ আসলেই কি হৃদরোগ বা স্ট্রোক প্রতিরোধে যথেষ্ট কার্যকর?

প্রধান গবেষক ডা. হেইডি মে বলেন, অতীতের অনেক গবেষণায় ভিটামিন ‘ডি’-এর পূর্ণ উপকারিতা ধরা পড়েনি, কারণ অংশগ্রহণকারীদের বেশিরভাগই পর্যাপ্ত পরিমাণ ডোজ পাননি। ফলে আগের ফলাফলগুলো হয়তো ভিটামিন ‘ডি’-এর প্রকৃত কার্যকারিতা প্রতিফলিত করেনি।

আরেকজন গবেষক ডা. ভিয়েত লে মনে করেন, প্রত্যেকের শরীর ভিন্নভাবে ভিটামিন ‘ডি’ শোষণ করে, তাই একই মাত্রার ডোজ সবাইয়ের জন্য কার্যকর নয়। কারও কারও শরীরে ভিটামিন ‘ডি’-এর স্বাস্থ্যকর স্তরে পৌঁছাতে অনেক বেশি সময় ও পরিমাণ প্রয়োজন হতে পারে।

এই গবেষণায় হৃদরোগ ও স্ট্রোক-আক্রান্ত রোগীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তাদের রক্তে ভিটামিন ‘ডি’-এর মাত্রা প্রতি মিলিলিটারে অন্তত ৪০ ন্যানোগ্রাম পর্যন্ত উন্নীত করার চেষ্টা করা হয়। দেখা গেছে, প্রায় ৯০ শতাংশ অংশগ্রহণকারীকে ভিটামিন ‘ডি’ সাপ্লিমেন্ট নিতে হয়েছে, এবং অনেকের ক্ষেত্রে প্রচলিত ডোজের তুলনায় বেশ কয়েকগুণ বেশি ডোজের প্রয়োজন পড়েছে। এমনকি অনেকে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় পৌঁছাতে তিন থেকে ছয় মাস পর্যন্ত সময় নিয়েছেন।

গবেষকরা বলছেন, যথাযথ পরিমাণে ও নিয়মিত ভিটামিন ‘ডি’ গ্রহণ করলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব, তবে সেটা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ ও পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে হওয়া উচিত।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন