![]() |
| ছবি : সংগৃহীত |
আরশ-২ — ইরানের নতুন এক দূরপাল্লার আত্মঘাতী ড্রোন, সাম্প্রতিক সময়ে বেশি নজরে এসেছে। এটি আরশ-১-এর উন্নত সংস্করণ এবং ইরানি প্রতিরক্ষা শিল্পের কৌশলগত গবেষণা ও উৎপাদনের ফল। প্রথমবার আরশ-১ ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে সামরিক মহড়ায় প্রকাশিত হয়েছিল; আরশ-২ তার ধারাবাহিকতা ধরে আগের মডেলের তুলনায় ক্ষমতা ও পরিসরে বৃদ্ধি করে তৈরি করা হয়েছে।
কেন গুরুত্ব পাচ্ছে
মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার যোগে ইরান শহেদ-১৩৬-এর পাশাপাশি আরশ-২-কে নতুনভাবে তুলে ধরেছে। ইরানি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এর দীর্ঘ পাল্লা, লক্ষ্যভেদে নির্ভুলতা এবং রাডার বায়পাস করার ক্ষমতা এটিকে আকর্ষণীয় করেছে, ফলে সামরিক দিক থেকে এক গুরুত্বপূর্ণ বাড়তি সক্ষমতা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য ও ক্ষমতা
আরশ-২-এর নকশা ডেল্টা আকৃতির ডানার উপর ভিত্তি করে, যা উচ্চ গতির জন্য সুবিধাজনক এবং জ্বালানি সাশ্রয়ী। ড্রোনের দৈর্ঘ্য প্রায় ৪.৫ মিটার এবং উইংসপ্যান প্রায় ৪ মিটার। এটি পিস্টন ইঞ্জিন (যেমন MD550 বা MDSO-4-520 টেম্পেস্ট, আনুমানিক ৫০ হর্সপাওয়ার) দ্বারা চালিত ইঞ্জিনের কারণে এর গতি ঘণ্টায় প্রায় ১৮৫ কিলোমিটার এবং প্রযোজ্য উচ্চতা প্রায় ৩,৬০০ মিটার পর্যন্ত বলা হয়েছে। সর্বোপরি আরশ-২-এর ঘোষণা করা কার্যকর রেঞ্জ প্রায় ২,০০০ কিলোমিটার।
রোলে বৈচিত্র্য
শুধু আত্মঘাতী হামলায় সীমাবদ্ধ নয়, ইরানীয় সামরিক কর্তারা এটিকে ইলেকট্রনিক যুদ্ধে, আঘাতপ্রবাহ সৃষ্টিতে এবং বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল করতে ব্যবহারযোগ্য বলে বর্ণনা করেছেন। দাবি করা হয়, ড্রোনটি হামলার আগে লক্ষ্যস্থলের উপগ্রহ/রাডার সুসংহত তথ্য সংগ্রহ করে নির্ভুল আঘাত নিশ্চিত করতে পারে।
উৎক্ষেপণ ও মোবাইল অপারেশন
আরশ-২ ট্রাক-মাউন্টেড বক্স লঞ্চ সিস্টেম অথবা JATO (জেট-অ্যাসিস্টেড টেকঅফ) লঞ্চারের মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গায় দ্রুত মোতায়েন করা যায়, ফলে অপারেশনালভাবে এটি আরও বেশি নমনীয়তা পায়।
ব্যবহার ও কৌশলগত প্রভাব
ইরানি সামরিক সূত্রে বলা হয়েছে, গত ১৪ জুন সকালে আরশ শ্রেণির কিছু ড্রোন ইসরায়েলের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করে। এমন ঘটনার তৎপরতায় এই ধরনের দূরপাল্লার ড্রোন প্রযুক্তির প্রাসঙ্গিকতা এবং কার্যকারিতা বেশি করে প্রকাশ পেয়েছে, কারণ এই ড্রোনগুলোর পরিসর ও নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা অঞ্চলের কৌশলগত সমীকরণকে প্রভাবিত করতে পারে। ২০০০ কিমি রেঞ্জ থাকলে পারস্য উপসাগরের আশপাশের বিভিন্ন সামরিক ও নৌ ঘাঁটি দেখা-শোনা ভুক্তভোগী অঞ্চলের মধ্যে পড়ে, ফলে অঞ্চলীয় ও গুরুতর আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা প্রভাব মাথায় আসে।
পর্যালোচনা
সংক্ষেপে, আরশ-২ ইরানের আত্মনির্ভর ড্রোন প্রোগ্রামের বড় একটি উন্নতি হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছে। দীর্ঘ পরিসর, উৎকর্ষতার লক্ষ্যভেদীতা এবং মাল্টি-রোল ক্ষমতা এটিকে কৌশলগতভাবে মূল্যবান করছে। একই সঙ্গে এর বিস্তার ও ব্যবহার বিশ্বস্ত প্রতিদ্বন্দ্বীদের জন্য নতুন প্রতিরক্ষা-পরিকল্পনা ও কৌশল নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তাও বাড়িয়ে দিয়েছে।
